রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন ‘১৪০০ সাল’ কবিতাটি লিখেছিলেন, মনে কি একবারও এ ভয় উঁকি দেয়নি যে এক শ বছর পর তাঁর কবিতার পাঠক না-ও জুটতে পারে? যেমন হয়েছে তাঁর পূর্বসূরি বিহারীরালের বেলায়, যিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বীই ছিলেন তাঁর সমকালে—অন্তত লেখালেখি-জীবনের মাঝামাঝি পর্যন্ত।
নিজের রচনার অমরতার পূর্বাভাস কি জীবদ্দশায় লেখক-শিল্পীর কাছে ধরা দেয়? কিংবা সমকালীন পাঠকের পক্ষেও কি আগাম ধারণা করা সম্ভব কোন রচনা দীর্ঘজীবী হবে?
বাস্তবে যে এর কোনোটাই খাটে না, তার ভূরি ভূরি প্রমাণ বিশ্বসাহিত্যে মেলে। তবে অমরতারও রকমফের রয়েছে—এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। কোনো বিশেষ সময়ের পাঁচজন গুরুত্বপূর্ণ (এবং জনপ্রিয়) কবি-লেখকের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটে যাওয়া বিচিত্র নয় যে তাঁদের মধ্যে এক-দুজনকে ৪০-৫০ বছর পর খুঁজে পাওয়া যাবে না, আবার এমন একজন হয়তো থেকে যাবেন, যিনি মহিরুহের মতো বিরাজ করবেন আর অবশিষ্ট দু-একজন টিকে থাকবেন অনেকটা পার্শ্বচরিত্রের মতো। এই পার্শ্বচরিত্রেরাও কম নন, কিন্তু লোকমুখে তাঁরা উচ্চারিত হবেন কম। হয়তো ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্যসূচিতে থাকবেন, বিপুলায়তন সন্দর্ভও হয়তো লেখা হবে তাঁদের ওপর, কিন্তু যে গুরুত্ব ও বিশেষত্ব দিয়ে সমকালে তাঁদের বিচার করা হতো, তার অনেকটাই পরবর্তী সময়ে তাঁদের জন্য বরাদ্দ থাকবে না। তিরিশ বা উত্তর-তিরিশের বাংলা কবিতার পুরোধাদের কথা যদি ধরি—বিষ্ণু দে, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, অমিয় চক্রবর্তী প্রমুখের পাল্লাভারী মঞ্চে বরিশালের জীবনানন্দ দাশ তো পার্শ্বচরিত্রই ছিলেন। কিন্তু ৪০ বছরও কি পার হয়েছিল মূল ও পার্শ্বচরিত্রের ভূমিকায় অদল-বদল ঘটে যেতে? আর সব্যসাচী বুদ্ধদেব বসুর তো কথা ছিল রবীন্দ্রত্তোর বাংলা সাহিত্যে মহিরুহ হয়ে টিকে থাকার। বাস্তবে সবাইকে পেছনে ফেলে একজনেরই রাজ্যপাট বিস্তৃত হয়ে চলেছে। তিনি সেই পার্শ্বচরিত্র জীবনানন্দ দাশ।
‘১৪০০ সাল’ কবিতাটি লেখার সময় রবীন্দ্রনাথের মনে আদৌ কোনো সংশয় ছিল না বলা যাবে না। কবিতার শুরুতে এর ইঙ্গিত রয়েছে। এক শ বছরের ব্যবধানে নতুন পাঠকের সঙ্গে তাঁর কবিতা কতটা যোগাযোগক্ষম—এ নিয়ে দ্বিধা-সংশয় আড়াল করার চেষ্টা তিনি করেননি। ‘আজিকার কোনো রক্তরাগ/ অনুরাগে সিক্ত করি পারিব কি পাঠাইতে’—কবিতার এই পঙ্ক্তি দুটিতেই প্রশ্নবিদ্ধ ভবিষ্যৎকে অস্বীকার না করার সত্যতা বেরিয়ে এসেছে। সেই সঙ্গে খ্যাতিকে অমর করতে পারা, না পারার অনিশ্চয়তায় কিছুটা মনস্তাপও আড়াল থাকেনি।
মূল কথা যা, সেটা যোগাযোগ-সক্ষমতা। একসময়ের সঙ্গে অন্য সময়ের যোগসূত্র স্থাপন বিষয়-ভাবনায় যত না, উপস্থাপনায় অনেক বেশি নির্ভরশীল। যুগে যুগে, এমনকি শত শত বছরেও বিষয়-ভাবনা কতটুকুই-বা পাল্টায়! নতুন যুগ কি আনকোরা, নতুন লেখার জোগান দেয়?
উত্তরাধুনিকদের মতে অবশ্য কোনো কিছুই নতুন নয়, মৌলিক নয়। রনাল্ড বাথস যেমন বলেন, লেখক যা-ই লেখেন, তা ঘুরেফিরে হাজার বছরের ঐতিহ্য ও মানুষের জীবনযাপনের বহুবিচিত্র বুদ্বুদ ও প্রতিধ্বনি বই কিছু নয়, আর তা ভাষায় যেমন, বিষয়-ভাবনায়ও একই। বাথস ও মিশেল ফুকো লেখকের ‘অথরশিপ’ বা লেখকত্ব খারিজ করতে গিয়ে লেখকের নাম পর্যন্ত মাথায় রাখার বিপক্ষে; কারণ, লেখার মান বিচারে নামের প্রভাব বিপত্তির কারণ হতে পারে। এই ক্ষুদ্র রচনায় এ নিয়ে বাহাসে না গিয়ে সাদামাটা অর্থে সাহিত্যিক অমরতা নিয়ে যৎকিঞ্চিৎ গালগল্প ফাঁদতে পারি।
খানিকটা পরিতাপের হলেও এ কথা অস্বীকারের উপায় নেই যে শুধু মেধাকে ভর করে সাহিত্যিক খ্যাতি সবার ক্ষেত্রে দীর্ঘজীবী হয় না। শেক্সপিয়ার, সার্ভেন্তেস, শেখভ, রবীন্দ্রনাথ, গ্যেটে, তলস্তয়, দস্তয়েভস্কি, এলিয়ট, কামু, কাফকা, বোর্হেসের পাশে কয়েক ডজন নাম অবলীলায় বসানো যাবে, যাঁরা মেধাকে সম্বল করেই পাঠকের কৌতূহল-আগ্রহ যুগ যুগ ধরে উসকে দিয়ে চলেছেন। তবে এর খানিকটা বিপরীত যে চিত্রটি রয়েছে তা এই: অনেকের ক্ষেত্রে মেধার ভারের সঙ্গে অন্যান্য অনুষঙ্গও সাহিত্যিক অমরতার জন্য খানিকটা হলেও দায়ী।
রোমান্টিক যুগের ইংরেজ কবিদের মধ্যে কিটস, কোলরিজ, বায়রন, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, শেলি, ব্লেক—তাঁদের মধ্যে কে কার ওপরে—এমন বালখিল্য তর্কে না গিয়ে সবাইকে যাঁর যাঁর কৃতির বৈচিত্র্য ও পাঠকরুচির ভিন্নতা সত্ত্বেও মোটামুটি এক কাতারে রাখাই সংগত। কিন্তু বাস্তব যা: শিখরস্পর্শী খ্যাতি-যশ নিয়েও দেড় শতাধিক বছর পর তাঁদের অবস্থান কিন্তু এক জায়গায় নেই। সাহিত্যের ছাত্র-শিক্ষকেরা এ নিয়ে তর্ক করতেই পারেন, তাঁদের একনিশ্বাসে এই কজনের নাম নিতে হয়। ওয়ার্ডসওয়ার্থের কথা ধরা যাক। মৃত্যুর (১৮৫০) সার্ধশতবার্ষিকী বেশ কয়েক বছর আগে পেরিয়ে এসেও তিনি তাঁর সমসাময়িক দিকপালদের তুলনায় মানুষের কাছে অনেক বেশি আদৃত। এক হিসাবে দেখা গেছে, প্রতিবছর সত্তর হাজারের বেশি দর্শনার্থী উত্তর-পশ্চিম ইংল্যান্ডের লেক ডিস্ট্রিক্টে তাঁর একসময়ের বাসভবন ডাভ কটেজে ভিড় জমান। বর্তমানে ওয়ার্ডসওয়ার্থ মিউজিয়ামÑএই ডাভ কটেজে তাঁর জীবনের বেশ কিছু স্মরণীয় সময় কেটেছিল। সমসাময়িক অন্যদের কথা বাদ দিলেও ওয়ার্ডসওয়ার্থ যাঁর সঙ্গে যৌথভাবে লিরিক্যাল ব্যালেডস প্রকাশের মধ্য দিয়ে ইংরেজ কাব্যে রোমান্টিক আন্দোলনের গোড়াপত্তন করেছিলেন, সেই সামুয়েল টেলর কোলরিজ নিজের অবিস্মরণীয় কীর্তিগাথা নিয়েও সাধারণ পাঠকের কাছে সেভাবে সমাদৃত নন। প্রতিভাধর কবি হিসেবে কোলরিজ বা উইলিয়াম ব্লেকের প্রতি অনেকের জোর পক্ষপাত রয়েছে জানা কথা।
টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং ইংরেজ রোমান্টিক সাহিত্য বিশেষজ্ঞ এইচ জে জেকসন একটা গোটা বই লিখে দেখাতে চেয়েছেন মেধার পাশাপাশি অন্য কিছু অনুষঙ্গও খ্যাতিকে দীর্ঘজীবী করতে কাজ করে। একে তাঁর বিবেচনায় ‘খ্যাতির অবিচার’ বললে ভুল হবে না। বইয়ে অন্য অনেক বিষয়-আশয়ের সঙ্গে ভদ্রমহিলা এ কথা বলতে ছাড়েননি যে লেক ডিস্ট্রিক্টে ওয়ার্ডসওয়ার্থের বাসভবনটি ঘিরে যদি এক শ বছর ধরে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে না উঠত, তাহলে হয়তো সাধারণের মনে তাঁর কবিখ্যাতি এত মুহুর্মুহু আন্দোলিত হতো না। কোলরিজ বা ব্লেক বা শেলির বেলায় তেমন ঘটার সুযোগ হয়নি। ট্যুর অপারেটররা ওয়ার্ডসওয়ার্থের কবিতা না পড়লেও পর্যটকদের জন্য জায়গাটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দ্রষ্টব্য বিবেচনা করে আসছেন। এ ধারণা বা বক্তব্য অনেকের মনঃপূত না-ও হতে পারে। তবে আমরা যদি অন্যভাবে খেয়াল করি, দেখতে পাব, ওয়ার্ডসওয়ার্থ ‘টিনটার্ন এবি’, ‘প্রিলিউড’-এর মতো কবিতার মাধ্যমে তাঁর কাব্যযশ প্রতিষ্ঠিত করলেও ছোটদের জন্যও বিস্তর কবিতা লিখেছিলেন, যা ইংরেজিভাষী ছাড়াও পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই শিশু-কিশোরদের মুখে মুখে ফিরেছে এবং আজও ফিরছে। অন্যদিকে কোলরিজ বা ব্লেক পড়তে গেলে স্কুলের উঁচু শ্রেণির বা কলেজের চৌকাঠে পা রাখতে হয়, নিদেনপক্ষে। কোলরিজের ‘কুবলাই খান’ বা ‘অ্যানসিয়েন্ট মেরিনার’-এর কাহিনি শিশু-কিশোরদের আকৃষ্ট করলেও কবিতা হিসেবে নিশ্চয়ই তাদের মাথার ওপর দিয়ে যাবে। আর ব্লেকের ‘টাইগার টাইগার বার্নিং ব্রাইট’ যতই কানে শিশুতোষ শোনাক, দুই-তিন পঙ্ক্তির পর শিশুদের কোনো খোরাকই এতে নেই। কথাগুলো লিখছি বটে, তবে ওয়ার্ডসওয়ার্থের আকাশচুম্বী খ্যাতির যুক্তি হিসেবে খুব যে সায় পাচ্ছে, বলা যাবে না।
এইচ জি জেকসনের কথায় ফিরে আসি। খ্যাতি দীর্ঘজীবী ও অটুট থাকার পেছনে তিনি প্রতিভার পাশাপাশি অনেক কবি-সাহিত্যিক-শিল্পীর ব্যক্তিগত জীবনাচরণকে যেমন গুরুত্ব দিয়েছেন (যেমনÑবোদলেয়ার, পিকাসো, ভ্যান গঘ), তেমনি অনেকের রচনার বিতর্কপ্রবণতাকেও। এর কারণ হিসেবে বলছেন একজন লেখক বেঁচে থাকেন যুগ যুগ ধরে তাঁর সৃষ্টির নবতর মূল্যায়নের ওপর। নতুনভাবে মূল্যায়নের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে তাঁর আশ্রয় জোটে পাঠ্যপুস্তকে (যেমন স্যার ওয়াল্টার স্কট, গালসওয়ার্দি, পি এস বাক)। এ কারণে রচনাকে হতে হবে শাখা-প্রশাখাময় বহুস্বরিক, সেই সঙ্গে বিতর্ক উদ্রেককারী, ক্ষেত্রবিশেষে উসকানিমূলক, এমনকি হেঁয়ালিপ্রবণও। জেকসন এগুলোকে বলছেন খ্যাতিবর্ধক বৈশিষ্ট্যাবলি (ফেম এনহেনসিং কারেক্টারিস্টিকস)। তাঁর যুক্তিকে পুরোপুরি অস্বীকার না করেও বলা যায়, খোদ ইংরেজি ভাষায় গত শতকের গোড়ার দিকের কবি-সাহিত্যিকদের অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা এই তথাকথিত খ্যাতিবর্ধক বৈশিষ্ট্যের শরণাপন্ন না হয়েও স্রেফ নিজেদের সৃষ্টি প্রতিভার জোরেই খ্যাতিকে অটুট রাখতে পেরেছেন। একই কথা খাটে ভিক্টোরিয়ান ও এডওয়ার্ডিয়ান প্রধান কবি-সাহিত্যিকদের বেলায়।
খ্যাতির ক্ষেত্রে প্রথম ও শেষ কথা যে মেধা, এ নিয়ে কূটতর্কের সুযোগ নেই। সেই সঙ্গে এ কথাও ঠিক যে সমকালীন পাঠক এই মেধা যাচাইয়ে বিভ্রান্ত হতে পারেন। একসময়ের পাঠকরুচি যে অন্য সময়ের পাঠকরুচি গড়ে দিতে পারে না, এই সত্যকে গুরুত্ব না দেওয়াই বিভ্রান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একটা কৌতূহলকর তথ্য দেওয়া যেতে পারে। ১৯২৯ সালে ম্যানচেস্টার গার্ডিয়ান পত্রিকা এক পাঠক জরিপ চালিয়ে দেখাতে চেয়েছিল সমকালীন ইংরেজ ঔপন্যাসিকদের মধ্যে কারা এক শ বছর পর, অর্থাৎ ২০২৯ সালে বা তারও পর পাঠকপ্রিয় থাকবেন। জরিপে সবার ওপরে যাঁর নাম ছিল তিনি গালসওয়ার্দি। তারপর যাঁদের নাম ছিল তাঁরা হলেন এইচ জি ওয়েলস, আর্নল্ড ব্যানেট। তবে হ্যাঁ, কিপলিংয়ের নামও ছিল, নিচের দিকে। পাঠকের ভবিষ্যদ্বাণী কখনো এমন খেয়ালি, এমনকি প্রায় হাস্যকরও হতে পারে। মোদ্দা কথা, আজকের খ্যাতি আগামীর কোনো মানদণ্ড তৈরি না-ও করে দিতে পারে।
সাহিত্যিক অমরতা নিয়ে অনেকেই নানা ধরনের কথাবার্তা বলে থাকেন। যেমন একজন মাঝারি মানের ঔপন্যাসিকের বই নিয়ে যদি সাড়াজাগানো চলচ্চিত্র তৈরি হয়, তাহলে ন্যায্য খ্যাতির বহুগুণ সেই চলচ্চিত্রের বদৌলতে তাঁর ভাগ্যে জুটে যায়। কিংবা ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্যসূচিতে দীর্ঘদিন উপস্থিতিও প্রাপ্য খ্যাতির অনেক কিছু বাড়তি জোগায়। এসবই পূর্বে উল্লেখিত খ্যাতিবর্ধক ব্যাপার-স্যাপার এবং ক্ষেত্রবিশেষে তর্কসাপেক্ষ।
এ প্রসঙ্গে দুটি উদাহরণ সম্ভবত অসংগত হবে না। আবু ইসহাকের সূর্যদীঘল বাড়ী ও সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর লালসালু আমাদের সাহিত্যের অনন্য সম্পদ হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘদিন পাঠ্যসূচিতে থাকা ও পরে চলচ্চিত্রায়িত হওয়ার সুবাদেই যে বই দুটি সাধারণ পাঠকের আগ্রহ বাড়িয়েছে, এ সত্য অস্বীকারের উপায় নেই।
অন্য ব্যাপারও রয়েছে। সম্প্রতি ইংল্যান্ডে জেন অস্টিনকে নিয়ে একটা অবিস্মরণীয় ঘটনা ঘটে গেছে, যা নিঃসন্দেহ তাঁর খ্যাতিকে আরও দীর্ঘদিন জনমনে অম্লান রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। মৃত্যুর দ্বিশতবার্ষিকী উপলক্ষে চলতি বছরের জুলাই মাসের ১৮ তারিখ থেকে ব্রিটিশ ১০ পাউন্ডের নোটে জেন অস্টিনের মুখাবয়ব শোভা পাচ্ছে। জেন অস্টিনের শক্তিমত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অবান্তর। তাঁকে বলা হয়ে থাকে কার্ল মার্ক্সের পূর্বসূরি মার্ক্সিস্ট—মানুষের জীবনযাপনে অর্থ-বৈভব ও শ্রেণিচেতনার যে রূপ তিনি তাঁর উপন্যাসে তুলে ধরেছেন, সে বিবেচনায়। সে অন্য প্রসঙ্গ। তবে ১০ পাউন্ডের নোটে তাঁর প্রতিকৃতি বেছে নেওয়ায় এ কথা বলা কম অন্যায্য যে অন্তত এক ডজন ইংরেজ কবি-সাহিত্যিককে তিনি পেছনে ফেলে গেলেন?
লেখকের সৃজনশক্তি বা খ্যাতিবর্ধক অনুষঙ্গ, যা-ই বলি, খ্যাতির নিশ্চয়তা দেবে এমন বলা যায় না। খ্যাতি সেদিক থেকে এক ধাঁধার নাম। উইলিয়াম এস ব্যারিংগোল্ডয়ের একটা লিমেরিকের স্বকৃত বাজে তরজমা দিয়ে শেষ করছি:
‘খ্যাতি সেই খেয়ালি দেবী
তোমার নাম উৎকীর্ণ করার যত চেষ্টাই করো
অবজ্ঞাই হতে পারে তোমার নিয়তি,
কিংবা স্বীকৃতির এমন মাল্য
যা ছিল তোমার লক্ষ্য থেকে বহু দূরে।’